রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
উজ্জ্বল রায়- নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
নড়াইল সদর থানার পুলিশের অভিযানে চোরাই মালামালসহ তিন চোর গ্রেফতার। গত ১৩/০৭/২৪ তারিখ ভোর আনুমানিক ৪:৩০ মিনিটে নড়াইল সদর থানার দূর্গাপুর গ্রামের মোছাঃ রাশিদা খাতুন এবং তার স্বামী মোঃ মোশারফ হোসেন বিশ্বাস তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজে চলে যায়।
মোছাঃ রাশিদা খাতুনের কন্যা লুবনা ইয়াসমিন(২১) প্রাইমারী নিবন্ধন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একই তারিখ সকাল অনুমান ৮ সময় বাড়ী থেকে বের হয়ে পরীক্ষা শেষে অনুমান ১১:৪০ মিনিটের সময় বাসায় গিয়ে দেখতে পায় যে, দরজার তালা ভাঙ্গা এবং ঘরের ভিতরের সব জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
লুবনা ইয়াসমিন তার মাকে সংবাদ দিলে মোছাঃ রাশিদা খাতুন ও তার স্বামী বাড়ীতে গিয়ে দেখেন, বাসার আলমারীতে থাকা ২টি স্বর্নের নেকলেস, ওজন ৬ ভরি, মূল্য অনুমান ৪,৮০,০০০/- টাকা; ২ টি স্বর্ণের চেইন, ওজন ২ ভরি, মূল্য-১,৬০,০০০/- টাকা; ৩টি স্বর্ণের রুলি, ওজন ০১ ভরি ৪ আনা, মূল্য ১,১২,০০০/- টাকা; ৪ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ওজন ১ ভরি ০৬ আনা, মূল্য অনুমান ১,২৮,০০০/- টাকা; ২টি স্বর্ণের আংটি, ওজন ৭ আনা, মূল্য ৩৫,০০০/-টাকাসহ নগদ ৭৩,০০০/-টাকা নেই।
এছাড়া মোসাঃ রাশিদা খাতুনের দেবর মোঃ জিল্লুর রহমানের আইএফআইসি ব্যাংকের একটি স্বাক্ষরিত চেকের পাতা যার একাউন্ট নাম্বার-০২১০১২৫২৫২৮৫১, এবং বসত বাড়ীর জমির দলিল ও পর্চা নাই। তাদের ধারণা গত ১৩ জুলাই ২০২৪ সকাল অনুমান-৯ সময় হতে বেলা অনুমান ১১:৩০ সময় মধ্যে যেকোন সময় দিনের বেলায় সঙ্গোপনে অজ্ঞাতনামা চোরেরা তাদের বসত বাড়ীতে প্রবেশ করে বর্ণিত চুরির ঘটনা ঘটায়।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মোসাঃ রাশিদা খাতুন নড়াইল সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে নড়াইল সদর থানার মামলা নং-২৩/১৮১, তারিখ-২১ জুলাই ২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৪৫৪/৩৮০ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
মামলা পরবর্তী নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদী হাসান’র নির্দেশনায় আসামি গ্রেপ্তার ও চোরাই মালামাল উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ।
এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) শোভন কুমার নাগ ও সিসিআইসির এসআই (নিঃ) মোঃ ফিরোজ আহম্মেদ সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে ১। মোঃ শামীম হোসেন(২০), পিতা-মোঃ জাকির হোসেন, মাতা-ময়না বেগম, সাং-করিমপুর, থানা-বাঘারপাড়া, জেলা-যশোরকে তার নিজ বাড়ী হতে গত ০২/০৮/২৪ তারিখ সকাল ০৮:০০ ঘটিকায়; ২। আব্দুর রহিম হোসেন(২৬), পিতা-মৃত লুৎফর মোল্যা, মাতা-সাহিদা বেগম, সাং-করিমপুর, থানা-বাঘারপাড়া, জেলা-যশোরকে তার নিজ বাড়ী হতে একই দিন সকাল ৯ সময় এবং শিমুল ঘোষ(৪০), পিতা-শিবুপদ ঘোষ, মাতা-রেবা রানি ঘোষ, সাং-মহাকার থানা-অভয়নগর, জেলা-যশোরকে তার জুয়েলারি দোকান হতে একই দিন বেলা ১২:৩০ সময় গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের হেফাজতে হতে ৭ আনা ১ রতি ওজনের স্বর্ণ, ৪ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের আংটি ও চোরাই কাজে ব্যবহৃত ২টি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন। আসামিরা পেশাদার চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য।
উক্ত চুরির ঘটনায় তদন্ত জানা যায় যে, ঘটনার দুই তিন দিন আগে চোর শামীম হোসেন বাদীর বাড়ীর আশপাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করে। পরবর্তীতে গত ১৩/০৭/২৪ তারিখে সকাল আনুমানিক ০৯:০০ ঘটিকার দিকে শামীম হোসেন এবং আব্দুর রহিমদ্বয় আরিফের নিকট হতে একটি মোটর সাইকেল ভাড়া করে। আনুমানিক সকালে এর দিকে উক্ত মোটর সাইকেল যোগে তারা নড়াইলে এসে পৌঁছে বাদীর বাড়ীর পাশে মেহগনি বাগানের ভিতর মোটর সাইকেলটি রাখে।
বাদীর বাড়ীর পিছনের বাড়ীতে রাজ মিস্ত্রীরা কাজ করতে ছিল। সেখান থেকে তাদের অগোচরে চোর রহিম একটা শাবল নিয়ে আসে। বাদীর বাড়ির পিছনের দিকে রান্না ঘরের জানালা খোলা ছিল। জানালার গ্রীল বেয়ে আসামিদ্বয় বাথরুমের ছাদে উঠে। তারপর দোতলার সিঁড়ি বেয়ে তারা নিচে নামে। শাবল দিয়ে চোর রহিম দরজার তালা ভেঙ্গে তারা ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।
ঘরের ভিতরে থাকা আলমারির তালা শাবল দিয়ে ভেঙ্গে বর্ণিত মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা উক্ত স্বর্ণ নিয়ে অভয়নগর থানাধীন চেঙ্গুটিয়া বাজারস্থ রাজিব জুয়েলার্সের মালিক শিমুল ষোষ এর নিকট ২,০৬,০০০/- (দুই লক্ষ ছয় হাজার মাত্র) টাকায় বিক্রয় করে।
আসামিদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আসামিগগণ দোষ স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।